আইডিয়া প্রকাশনে স্বাগতম!
ড্রপডাউন মেনু
গ্রন্থকথা: ”ব্রাত্যকথা” সমাজ, রাজনীতি, শোষণ, বৈষম্য, প্রেম, প্রতিবাদ ও সংস্কৃতির টানাপোড়েন
| | ১টি মন্তব্য

বই: ব্রাত্যকথা
লেখক: কাজল চক্রবর্তী
প্রকাশক: আইডিয়া প্রকাশন, রংপুর, বাংলাদেশ
মূল্য: ১০০টাকা
প্রচ্ছদ: বেনামিবাউল

কবি কাজল চক্রবর্তীর কবিতাবই “ব্রাত্যকথা” প্রকাশ হয়েছে ২০২৫ এর বইমেলায় আইডিয়া প্রকাশন থেকে।

দু ফর্মা এ কবিতাবইটি মূলত আইডিয়া প্রকাশনের পেপারব্যাক সিরিজ বইগুলোর একটি। উল্লেখ করা ভালো যে আইডিয়া প্রকাশন সহজমূল্যে কবিতাকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে দুই ফর্মার পেপারব্যাক সিরিজ আকারে প্রকাশ করছে।

এ কবিতাবই “ব্রাত্যকথা” সমাজ, রাজনীতি, শোষণ, বৈষম্য, প্রেম, প্রতিবাদ ও সংস্কৃতির টানাপোড়েনকে কেন্দ্র করে লেখা। কবিতার পঙক্তিগুলো ব্যক্তিগত অনুভূতির পাশাপাশি সমষ্টিগত বাস্তবতাকেও তুলে ধরছে।

যেমন এক দিকে সাধারণ মানুষের দুর্দশা, ক্ষমতাশালীদের লুটপাট, এবং রাজনীতির কূটচাল উঠে এসেছে। তেমনি সমাজের অন্যায়, দুর্নীতি ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর স্পষ্ট হয়েছে। কাজল চক্রবর্তীর এ বইয়ে পুঁজিবাদ, বিদেশি প্রভাব এবং নিজস্ব ঐতিহ্যের অবমূল্যায়ন নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ রয়েছে। পুরোনো মূল্যবোধ হারিয়ে যাওয়া ও সম্পর্কের টানাপোড়েনে কবিতাগুলো শক্তিশালী প্রতিবাদ। কখনো কখনো বাস্তবতা, ব্যঙ্গ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রকাশ পেয়েছে, যা পাঠককে ভাবতে বাধ্য করবে-

“ব্রাত্যকথা” কবিতা সমাজের সেই পরিবর্তনের কথা বলে যেখানে পুরোনো জীবনধারা ও মূল্যবোধ ব্রাত্য হয়ে গেছে। যারা একসময় সন্তানদের জন্য আত্মত্যাগ করেছে, তারা আজ বৃদ্ধাশ্রমে একাকী জীবন কাটায়। মূলত পারিবারিক মূল্যবোধের ক্ষয় এবং বর্তমান সমাজে অভিভাবকদের প্রতি উদাসীনতার চিত্র। এই কবিতার প্রতীক হ্যারিকেন, কেরোসিনের কুপি- যা পুরোনো জীবনের প্রতীক, এই নতুন প্রজন্মের কাছে আজ সেকেলে। অন্যদিকে মায়ের কপালের চাঁদটিপ- মাতৃত্বের আলো, যা এখন সন্তানের সংসারে মূল্যহীন।

“দ্যাখা হলে” অতুলপ্রসাদ সেনের গান ও সঙ্গীত জীবন নিয়ে লেখা। কবিতাটি তার অবদানকে স্মরণ করে এবং প্রশ্ন তোলে যে, তার মতো প্রতিভাবান শিল্পীদের যথাযথ সম্মান দেওয়া হয় কিনা। গানের ভেলা অর্থাৎ- সঙ্গীতের মাধ্যমে অতুলপ্রসাদের ব্যাপ্তি।

“স্বৈরিণী” শোষিত ও দুঃখী মানুষের প্রতিবাদ এবং সমাজের অন্তরালের দুর্নীতির গল্প এটি। সমাজের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারকে প্রতীকী ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। কবির মতে- দোলে সততার ঝুলি- সততা এখানে ভঙ্গুর ও সংখ্যালঘু। কখনো বা স্বর্গচত্বর- বাস্তবে যা দুঃখ-দারিদ্র্যের কেন্দ্রবিন্দু। কখনো বা অপুষ্টি ও অনাহার- যা সমাজের বৈষম্যের প্রতীক।

“ভাষা” কবিতায় ভাষা শুধু কথার বাহন নয়, শরীর ও অনুভূতিরও ভাষা আছে। এ কবিতা মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও অভিব্যক্তির স্বাধীনতা প্রকাশ করে। যেমন শরীরের ভাষা- মৌনতার শক্তি ও ইঙ্গিতপূর্ণতা। সভাপতি- ক্ষমতাবান ব্যক্তি, যিনি ভাষার অনুভূতিকে দমন করতে চান।

“সাকিলের জন্মদিনে” এটি হাস্যরসাত্মক একটি কবিতা, যেখানে পাঙাস মাছের খোঁজে এক ধরনের নাটকীয়তা তৈরি হয়েছে। এটি দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে রম্য রচনার মতো। পাঙাস মাছ- সাধারণ মানুষের সহজ ও সস্তা আনন্দ।

“এমন বন্ধু” এই কবিতায় সেই বন্ধুদের কথা বলা হয়েছে যারা সামনে থেকে আপনজনের মতো আচরণ করে কিন্তু পেছনে ছুরিকাঘাত করতে ভাবে না। কবিতায় শব্দ ও গন্ধ- মানুষ ও বন্ধুত্বের সত্যতা বোঝার উপায়। এবং সারমেয়র মতো গন্ধ খোঁজা- মানুষের স্বার্থপরতা ও প্রবঞ্চনা।

“আবার” এটি সামাজিক বাস্তবতার এক নির্মম সত্য- যৌন সহিংসতা বারবার ঘটে, অথচ সমাজ তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যেমন উৎসবের মজা- ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধের পরও সমাজের উদাসীনতা। এবং ঢাক-ঢোল ও বিসর্জন- আনন্দের আড়ালে ভয়াবহ বাস্তবতা ঢাকা পড়ে যাওয়া।

“চালচিত্র” কবিতা বাঙালি সংস্কৃতি ও পশ্চিমা সংস্কৃতির দ্বন্দ্বকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কবিতাটি নিজের ঐতিহ্য ভুলে যাওয়ার প্রতি বিদ্রূপ আকারে প্রকাশ হয়েছে। যেমন বারবিকিউ- পাশ্চাত্য খাবার ও সংস্কৃতি। এবং ডলার ও বারগার- বৈদেশিক প্রভাবের প্রতি তামাশা।

“প্রকাশ পেলো” অনেক সত্য ধামাচাপা পড়ে যায়, কিন্তু একদিন না একদিন প্রকাশ পায়। এখানে টাটকা খবর- মিডিয়ার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সংবাদ। অন্যদিকে অন্ধকার- সত্য লুকিয়ে থাকার অবস্থা।

“ব্যথা” কবিতা এটি গণতান্ত্রিক অধিকার, শোষণ এবং রাজনীতি নিয়ে লেখা। সাধারণ মানুষের ব্যথা কোনো একক বিষয় নয়, এটি শোষিত শ্রেণির সার্বজনীন বাস্তবতা। কবিতায় গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি ও ধুলোঝড়- রাজনৈতিক দুর্যোগ ও প্রতিশ্রুতি। এবং বন্যা হলে ব্যথাকে ভাসতে দেওয়া- সাধারণ মানুষকে ধৈর্য ধরতে বলা, কিন্তু পরিবর্তন হয় না।

“উৎসবে” প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ, যেখানে প্রেম বাণিজ্যিক রূপ পেয়েছে। কবিতায় যেমন প্রেমের পাখি- রোমান্টিকতার প্রতীক, যা কৃত্রিম। আবার ঘাসে দৌড়ানো- ভালোবাসার সারল্য, যা এখন আর নেই।

“তৃতীয়ার চাঁদ” সমাজের দারিদ্র্য ও বৈষম্যের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। এখানে কবিতায় নুন আনতে পান্তা ফুরায়- যা চরম দারিদ্র্যের প্রতিচিত্র। অন্যদিকে রকেট ট্রেন ও কোটিপতি সংসদ- উন্নয়ন ও বৈষম্যের দ্বন্দ্ব।

“নিজের নিশানে” প্রতিবাদের শক্তি নিয়ে লেখা এ কবিতা। যেখানে ধানক্ষেত- কৃষকের লড়াই ও স্বার্থ। আর বিচার প্রহসন- ন্যায়বিচারের অভাব।

“ষোলো আনা” এটি সমাজের শোষণ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রতিরোধের ইচ্ছা নিয়ে লেখা কবিতা। কবিতায় হেমলক- আত্মত্যাগ ও বিদ্রোহের প্রতীক। আর বিচারের ষোলো আনা- পূর্ণ ন্যায়ের দাবি।

“ইতিহাস বলে” কবিতাটি ইতিহাসের শিক্ষা ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরে। যেখানে স্বৈরিণীর ক্ষমা নেই- অত্যাচারীর চূড়ান্ত পরিণতি।

“মান্দাক্রান্তা” সমাজের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। এ কবিতায় ছন্দের ভার- কাব্যের শক্তি।

“মাছি” কবিতাটি বিচারের নামে প্রহসনের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। এখানে মাছি না থাকা- বিচারহীনতার প্রতীক।

“প্রয়োজন শেষ” প্রতিবাদের প্রয়োজন শেষ হয় না, বরং চলমান থাকে। যেমন অক্ষর ও প্রতিবাদ- কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে লড়াই।

“কবিতাই লিখেছি” প্রতিবাদ ও সাহিত্যের সংযোগ নিয়ে লেখা কবিতা। এখানে স্লোগান ও কবিতা- সত্য ও প্রতিবাদের মিশ্রণ।

ব্রাত্যকথা বইয়ের কবিতাগুলো মূলত সমাজ, রাজনীতি ও ব্যক্তিগত অনুভূতির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ।

সাকিল মাসুদ

কবি, সম্পাদক ও প্রকাশক

বিভাগ: Uncategorized, গ্রন্থালোচনা

1টি মন্তব্য: “গ্রন্থকথা: ”ব্রাত্যকথা” সমাজ, রাজনীতি, শোষণ, বৈষম্য, প্রেম, প্রতিবাদ ও সংস্কৃতির টানাপোড়েন”

  1. Kajal says:

    Khub sundor laglo tomar bislation.
    Tumi sudhu ko bi now, bhalo pathok

Leave a Reply